ভুয়া নামে আন্দরকিল্লার ঠিকানা দিয়ে ১৪৩ কোটি টাকা হাতানোর চেষ্টা, সিএন্ডএফ চেনে ‘মুখচেনা’

চীন থেকে নকল ব্যান্ডরোল আমদানি থেকে ১৪৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল যে প্রতিষ্ঠানের নামে, আদতে সেই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়।

চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লার জিএ ভবনের ঠিকানায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের খোঁজে গেলে দেখা যায়, ‘এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানই সেখানে নেই। চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লার জিএ ভবন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এ ভবনে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই।’

জিএ ভবন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ ভবনে দুইশতাধিক দোকান বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানে আমাদের এ মার্কেটে নেই।’

আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠান পাওয়া না গেলেও পণ্যচালানটি খালাসের দায়িত্বে থাকা সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের মালিক মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন বলেন, ‘বাপ্পু নামের এক লোক আমাদেরকে আমদানি করা চালানের কাগজপত্র দিয়েছিল। তাকে আমরা মুখচেনা চিনি। কিন্তু তিনি বলেছিলেন চালানে কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমরা মাত্র ২৫ হাজার টাকায় চালানটি খালাসের দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু কোন পাপ না করে আমিও ফেঁসে গেলাম। তবে আমি কাস্টমস হাউসকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো বলে জানিয়েছি।’

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন থেকে সিগারেটের ১৪৩ কোটি টাকার রাজস্ব মূল্যমানের নকল ব্যান্ডরোল এনে ধরা পড়েন বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামের চট্টগ্রামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান । কাগজ ঘোষণায় নিয়ে আসা হয় ওই ব্যান্ডরোলগুলো। এ চালানে আনা জাল স্ট্যাম্প ছিল তিন কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস। পণ্যচালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিল সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেড।

টাকার মানের সমর্যাদা বা বিকল্প হিসেবে ভ্যাট পরিশোধের জন্য সিগারেটের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এই মূল্য সংযোজন করের স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল। এ নকল ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে দেশের নামিদামি সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। এখানে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার মানেই সরাসরি ভ্যাট ফাঁকি— যা দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিড়ি বা সিগারেটের গায়ে দুই দিক থেকে লাগানো থাকে ব্যান্ডরোল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইন অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ‘দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই জাতীয় পণ্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ব্যান্ডরোল ব্যবহার করা হয় সেই পরিমাণ টাকা ভ্যাট দিতে হয় বিড়ি-সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট, ইভেস্টিগ্রেশন এন্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ শরফুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূসক স্ট্যাম্প বিড়ি সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লাগানো অর্থ হলো সেই পরিমাণ ভ্যাট প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এখানে নকল মূসক স্ট্যাম্প লাগানো মানে হলো পুরোটাই ফাঁকি। সুতরাং বিষয়টি তদন্ত করে বের করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ফৌজদারীসহ প্রচলিত অন্যান্য আইন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm