পথে পথে একই জিজ্ঞাসা ‘ভাই গরুর দাম কত?’
কোরবানির পশু নিয়ে মানুষের কৌতূহলের যেন শেষ নেই। ‘ভাই গরুর দাম কত?’ ‘কত দিয়ে নিছেন?’ হাট থেকে কোরবানির কিনে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত এ প্রশ্নের মুখে পড়েনি এমন মানুষ বোধহয় পাওয়া যাবে না।
ঈদ উপলক্ষে নগরীতে এখন সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত বাক্য এটাই। প্রশ্নকর্তা শতাধিক হলেও উত্তরদাতা কিন্ত একজনই থাকে। তাতেও উত্তরদাতা বিরক্ত হন না। হাসিমুখে জানিয়ে দিচ্ছেন পছন্দের কেনা পশুটির দাম।
মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুসলমানরা। দেশজুড়ে কোরবানির গরু বা ছাগল বেচাকেনা নিয়েই ঈদের আগের এক সপ্তাহ ব্যস্ত থাকে সবাই।
নগরের অক্সিজেনের ইয়াছির আয়ান নামের একজন বাসিন্দা মুরাদপুরের বিবিরহাট গরুর হাট থেকে কেনা গরু নিয়ে ফিরছিলেন। তিনি জানান, গরুটি কেনা হয়েছে হাসিলসহ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে।
তিনি বললেন, ‘হাট থেকে গরু কেনার পর থেকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আসছি। হাটেই অনেকে জানতে চেয়েছেন। প্রথম দিকে ভাল লাগছিল। এরপর মানুষ এই প্রশ্ন এতো বার করছে উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত লাগছে তারপরও বলতে হচ্ছে। এর মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছি।’
সাগরিকা গরু বাজারে গরু কিনতে এসেছেন মো. সেলিম সঙ্গে আছে ছেলে হোসেন সে পড়ে ক্লাস নাইনে। হোসেন গরু কিনতে বাবর সাথে এসে অনেক খুশি। তাদের এখনও গরু পছন্দ হয়নি। সকাল ৯টায় তারা বাজারে এসেছিল এখন বাজে দুপুর ১২টা এখনও পর্যন্ত যারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাছে দাম জেনে নিচ্ছেন। হোসেন বিষয়টি খুবই উপভোগ করছে।
সিনানের বয়স ১৫। পড়ে দশম শ্রেণীতে। বাবার সাথে বিবিরহাট গরুর হাটে এসেছে সকাল ১০টায়। এখন দুপুর ১টা পুরো হাট চষে ফেলেছে বাবা-ছেলে। গরু পছন্দ হলে, দামে মেলে না। আবার কম দামে গরু পছন্দ হয় না। শেষমেশ ১টার দিকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত সিনান তার বাবাকে বলে, ‘বাবা কালো রঙের এই গরুটা কেনো আমার পছন্দ হয়েছে’ পরে সেই গরুটি কিনে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করে বাপ-বেটা। কিছুক্ষণ পরপর পথচারীরা তাদের কাছে জানতে চায় গরুর দাম কত? মুখে হাসি রেখেই সিনান বলতে থাকে ৬০ হাজার টাকা! হামজারবাগ চার রাস্তার মোড়ে তাদের সাথে কথা হয়।
মুরাদপুর-অক্সিজেন রোড়ের পশ্চিম পাশে বিবিরহাট গরু বাজার। সড়কের দুই পাশেই এখনও গরুর সারি। দেখা গেল সড়কের ডান পাশ দিয়ে ক্রেতারা দলে দলে বাজারে ঢুকছেন। আবার রাস্তার পূর্ব পাশে অন্য চিত্র। গরু কেনার পর হাসতে হাসতে দলে দলে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতা। রাস্তার পাশে দাড়ানো পথচারীরা ক্রেতাদের কাছে জানতে চাচ্ছেন ‘ভাই, কত?’
বিবিরহাটের মত নগরীর অন্য হাটগুলোর চিত্রও একই রকম। একদল গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন আর একদল হাটের দিকে যাচ্ছেন। গরু কিনে ফেরা লোকদের বলতেই হচ্ছে ‘ভাই এত টাকা দিয়ে কিনেছি।’
বিবিরহাট গরু বাজার ঘুরে দেখা গেল, যেখানে দেশি ছোট ছোট গরু বাঁধা, সেখানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। বেশিরভাগ ক্রেতা ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের মধ্যে বেশি গরু কিনছেন।
গরু কিনে বাড়ি ফেরা ক্রেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, গরুর দাম নাগালের মধ্যে আছে। ভালো দামে গরু কিনতে পারছেন তারা। শনিবার সকালে হালকা বৃষ্টির পর দাম কিছুটা কমে যায়। তবে দুপুরে আবার আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত গরু আছে। বেচাকেনাও হচ্ছে ভালোই তবে বড় গরুর তুলনায় ছোট গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুও আজ শেষদিন বেশি বিক্রি হবে বলেও জানায় বিক্রেতারা।